টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার পেছনে মূল রহস্য
টাইটানিক ছিল একটি বিলাসবহুল জাহাজ এবং সেই সময়ের মানুষের দ্বারা তৈরিকৃত সবচেয়ে বড় চলমান মানবসৃষ্ট বস্তু। ১৯১২ সালের ১৫ই এপ্রিল মধ্য রাতে উত্তর আটলান্টিকের নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে ডুবে যায়।
আমরা অনেকেই জানি যে টাইটানিক মাঝ সমুদ্রে বরফের পাহাড় বা আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবে গিয়েছিল। কিন্তু এর ঘটনা ঘটার পেছনে অনেকগুলো কারন আছে যা অনেকের অজানা।
টাইটানিক(Titanic) জাহাজ ডুবা ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর এই ঘটনা নিয়ে আগ্রহ সবার মধ্যেই আছে। আপনার আগ্রহের পালে হাওয়া দেওয়ার দায়ভারটা আমাদের উপর ছেড়ে দেন।
এই ব্লগ পোস্টের প্রধান উদ্দেশ্য টাইটানিক জাহাজ সম্পর্কে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া। আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে আসাকরি বিশালাকার এই জাহাজ সম্মন্ধে আপনার বেশ ভাল একটা ধারনা হবে।
টাইটানিক জাহাজ নির্মানের প্রেক্ষাপট
টাইটানিক জাহাজ ডুবার ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগে এই জাহাজটির তৈরির কিছু নেপথ্যের কাহিনী আপনাদের জানা অত্যাবশকীয় ।
১৯০৭ সালে এক সন্ধ্যায় চায়ের কাপে আড্ডা দিতে দিতে হোয়াইট স্টার লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্রুস ইসমে এবং সিনিয়র অংশীদার এবং শিপইয়ার্ড হারল্যান্ড এবং উলফের চেয়ারম্যান লর্ড পিরি, তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি দ্য কানার্ড লাইনের চেয়ে বড় এবং ভাল একটি জাহাজ তৈরি করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন।
রাতের খাবারের পরে, তারা দুজন মিলে সময়ের সবচেয়ে বিলাসবহুল তিনটি জাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা করলেন; তাদের মধ্যে টাইটানিক অন্যতম। আর বাকিগুলো হচ্ছে অলিম্পিক এবং ব্রিটিয়ানিক। সেই তিনটি জাহাজ ১৯১৩ সালের মধ্যে প্রস্তুত করতে হবে সেই সিধান্তে তারা একমত হোন।
টাইটানিককে পুরোপুরি ফ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। বড় ইস্পাত প্লেটটি ফ্রেমের মধ্যে গজাল দিয়ে আটকে ছিল। ইস্পাতটিকে জায়গায় রাখতে তিন মিলিয়নেরও বেশি গজালের ব্যবহার করা হয়েছিল।
টাইটানিক এবং সহদর জাহাজ অলিম্পিক এবং ব্রিটানিকের স্থপতি ছিলেন আলেকজান্ডার কার্লাইল। তিনি বালিমেনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন । সাধারণত জাহাজের অভ্যন্তরীণ নকশার মূল হোতা হিসিবে মনে করা হয়।
টাইটানিকের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৯ সালের ৩১শে মার্চ । নির্মাণ কাজ চলাকালীন অবস্থায় নির্মান সংস্থা ( হারল্যান্ড এবং উলফ শিপইয়ার্ড) বিশালাকার এই জাহাজটি তৈরির জন্য প্রায় ১৪,০০০ জন লোক নিয়োগ করেছিল।জাহাজটি সম্পূর্ণ করতে দুই বছর সময় লেগেছিল, যার হুল ছিল সেই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলমান বস্তু।
টাইটানিক সর্বপ্রথম লাগান নদীর জলে প্রবেশ করে।তারপর সমুদ্রে একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, টাইটানিক, শুধুমাত্র একটি কঙ্কালের ক্রু নিয়ে, ২ এপ্রিল ১৯১২ সালে সাউদাম্পটনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
টাইটানিকের যাত্রাপথ (Route of Titanic from Southampton to New York)
টাইটানিক ১০শে এপ্রিল ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে যাত্রা করে। এটি আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে নির্মিত হয়েছিল এবং তার প্রথম সমুদ্রযাত্রার জন্য ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। টাইটানিক ফ্রান্সের চেরবার্গ এবং আয়ারল্যান্ডের কুইন্সটাউনে যাত্রা বিরতি দেয়। এর শেষ গন্তব্যস্থল ছিল নিউইইয়র্ক। যদিও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে টাইটানিক তার গন্তব্যে নিওইয়র্কে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
টাইটানিক জাহাজের যাত্রার মাহেন্দ্রক্ষনটি দেখার জন্য লক্ষাধিক মানুষ সাউদাম্পটন বন্দরে ভিড় জমায়। তাছাড়া স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঐতিহাসিক এই জাহাজ।
টাইটানিক সেই সময়ের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন জাহাজ হওয়ার সুবাধে যাত্রীদের মধ্যে অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করে। তাছাড়া টাইটানিক প্রথম যাত্রা করছিল। আর ঐতিহাসিক এই মুহুর্তের সাক্ষী থাকার জন্য যাত্রীদের মধ্যে RMS Titanic এর টিকেট সংগ্রহের ধুম পড়ে যায়।
টাইটানিকের প্রথম শ্রেনীর টিকেটের মুল্য ছিল ২,৯০,০০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেনীর টিকেটের মুল্য ছিল ১,১৬,০০০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেনীর মুল্য ছিল ২০০০ টাকা।
টাইটানিক দুপুর নাগাদ ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করে। ৮৮০ জন ক্র-মেম্বার সহ মোট ২২২৪ জন যাত্রীসহ টাইটানিক যাত্রা শুরু করেছিল।
সাউদাম্পটন-চেরবার্গ-নিউইয়র্ক রুটটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই পথে যাত্রা করতে মোট প্রায় 6 দিন লাগতে হবে.
টাইটানিক জাহাজ কেন ডুবেছিল
এই বর্ননাটি একটু বড় হবে কিন্তু আমরা আশাবাদী টাইটানিক ডুবার সঠিক ইতিহাস জানার জন্য ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আমরা চেস্টা করেছি সেদিন রাতে ঘটা ঘটনার ছোটখাট সকল বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরে জন্য।
১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল টাইটানিক ইংল্যান্ডের সাউথাম্পটন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরুর মাত্র দুই দিনের মাথায় এই জাহাজটি আইস ওয়ার্নিং(Ice Warning) পেতে শুরু করে।
আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে টাইটানিক আমেরিকার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছিলো আর সেই রুটে অনেকগুলো আইসবার্গ বা বরফের পাহাড় ছিল। সাবধানতা অবলম্বন না করলে আইসবার্গ যেকোন সময় জাহাজের বিপদ ডেকে আনতে পারে। ১৯৯২ সালের ১০ই এপ্রিল টাইটানিকের সাথে সে রকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল।
সাধারণত সমুদ্রে চলাচলের সময় একটি জাহাজ অন্য জাহাজকে রেডিও সিগনালের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একে অপরকে সাহায্য করে। যাত্রাপথে কোন ধরনের বাধা বিপত্তি আছে কি না সেই তথ্য প্রেরন করে থাকে। সেই সিগনালের উপর ভিত্তি করে টাইটানিক তার গতিপথ দুইবার পরিবর্তন করলেও তার চলার গতি অপরিবর্তিত রাখে।
৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে টাইটানিক আমেরিকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ২ দিন পর ১৪ এপ্রিল টাইটানিককে আরও ৭টি আইসওয়ার্নিং দেয়া হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ এবং তার সহযোগিরা এই ওয়ার্নিংকে উপেক্ষা করে টাইটানিকের গতি না কমানোর সিধান্ত নেন। এরপর আস্তে আস্তে বেলা গড়িয়ে রাত হওয়ার সাথে তাপমাত্রা আরও কমে যায়। উপরন্তু সেদিন আকাশে চাঁদ না থাকার কারনে যাত্রাপথে আলো স্বল্পতা ছিল।
যার ফলে জাহাজ থেকে বাইরের পরিস্থিতি তেমনভাবে অনুধাবন করা যাচ্ছিল না। জাহাজের উপরে একটি লুক আউট পয়েন্ট(Lookout Point) থাকে যা জাহাজ থেকে কিছু উঁচুতে থাকে এবং সেইখানে একজনকে বসিয়ে রাখা হয়। তার দায়িত্ব হচ্ছে জাহাজের সামনে যেকোন বাধা বিপত্তি সম্পর্কে নজরদারি করা।
সেই জায়গাটি খোলা হওয়ার কারনে সেখানে অবস্থানকারী ব্যাক্তিকে প্রচন্ড ঠান্ডার মোকাবেলা করতে হয়। তাছাড়া ঠান্ডা বাতাসের কারনে খুব স্বাভাবিকভাবে চোখে পানি চলে আসে যার ফলে সামনের দিকে নজর রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
তখন রাত ১১টা ৩৯মি বেজেছিল এবং সেই জায়গায় ফ্রেডরিক ফ্লিট(Fredrick Fleet) নামে একজন ব্যাক্তি সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন জাহাজের সামনে একটি বড় বরফের পাহাড়। পাহাড় দেখামাত্রই তিনি নিয়মমাফিক তিনবার ঘন্টি বাজান এবং ফোনের মাধ্যমে ব্রিজে বসা অফিসার উইলিয়াম মারডকের সাথে যোগাযোগ করেন।
অফিসার মারডক বিষয়টি শুনামাত্র ইঞ্জিনরুমে অবস্থানরতদের জাহাজটিকে বাম দিকে ঘুরানোর জন্য বলেন। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং মাত্র ১ মিনিট পর রাত ১১.৪০ মিনিটে টাইটানিক বরফের পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খায়।
পাহাড়টির আকৃতি নেহাত ছোট ছিল না। এটি আকারে একটি ফুটবল মাঠের মত এবং এর ওজন ১.৫ টনের কাছাকাছি। বরফের পাহাড়ের সাথে টাইটানিক জাহাজের সামনের ডানের দিকের সাথে সংঘর্ষ হয়।
সেই অংশকে বো (Bow) বলা হয় এবং এর নিচের দিকে বের হয়ে যাওয়া অংশকে কিল (Keel) বলে। টাইটানিকের সাথে বরফের ধাক্কার ফলে জাহাজে একটি অনেক বড় গর্তের সৃষ্টি হয় এবং জাহাজের বডিতে অনেকগুলো ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়।
আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে একটি বরফের টুকরা কিভাবে ভারী মেটাল দিয়ে বানানো জাহাজকে কাটতে পারে। ফ্রিজের ভেতর রাখা বরফ মেটাল কাটতে পারবেনা কারন এর ওজন খুবই নগন্য।
অন্যদিকে এই বরফের পাহাড়ের ওজন ১.৫ টনের মত ছিল তাই টাইটানিকের মত শক্তিশালী জাহাজকে এত বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। দুঘর্টনাটি ঘটার কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে জাহাজের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ ও আর্কিটেক্ট থমাস এন্ড্রুস এই ধাক্কার ফলে টাইটানিক ঠিক কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা দেখার জন্য যান ।
তখন তারা বুঝতে পারেন টাইটানিককে ডুবে যাওয়া থেকে বাচানো অসম্ভব। তারা দুজনই ব্যাপারটা দেখে অবাক হয়ে গেলেন কারন তারা এই জাহাজটি কোনভাবেই ডুববে না বলেই তাদের ধারনা করেছিলেন।
এর স্বপক্ষে যথেষ্ট কারনও ছিল এই যেমন টাইটানিকে দুটি সেইফটি ফিচার খুব দারুন ছিল। এই জাহাজের ভেতর একটি ডাবল বটম হাল ছিল। যার অর্থ জাহাজে দুটি লেয়ার ছিল ।
যদি নিচের লেয়ার ভেংগে যায় তবে ওপরের লেয়ার জাহাজকে বাচিয়ে দেবে। হাল হচ্ছে জাহাজের মেইন বডি। দ্বিতীয় হালটিকে ১৬টি পৃথক ওয়াটার টাইট কম্পার্ট্মেন্ট দ্বারা ভাগ করা হয়েছিল।
এই ১৬টির মধ্যে যদি ৪টি কম্পার্ট্মেন্টও পানিতে ভরে যায় তাও জাহাজটি চলতে থাকবে কোন অসুবিধা ছাড়াই। কিন্তু সংঘর্ষটা জাহাজের সম্মুখ প্রান্তে হওয়ায় ডাবল বটম হালও জাহাজকে ডুবার হাত থেকে বাচাতে পারেনি। কারন সাইড দিকে একটি মাত্র লেয়ার লাগানো ছিল।
এরই মধ্যে ৬টি ওয়াটারটাইট কম্পার্ট্মেন্ট পানিতে ভরে গিয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে জাহাজকে আর ডুবানোর হাত থেকে বাচানো সম্ভব ছিলনা।
বরফের সাথে সংর্ঘষের ঠিক ২০ মিনিট পর রাত ১২.০০টা দিকে জাহাজের ক্যাপ্টেন স্মিথ তার সহযোগী ক্রু সদস্যদের আদেশ দেন একটি ডিস্ট্রেস সিগনাল পাঠানোর জন্য ।
যদি আশেপাশে কোন জাহাজ থাকে তাহলে এই সিগনাল পেয়ে তাদের সাহায্য করতে পারে। সিনিয়র রেডিও অপারেটর একের পর এক ডিস্ট্রেস সিগনাল পাঠাতে থাকেন এবং প্রত্যাশা করছিলেন কেউ না কেউ তার সিগনাল গ্রহণ করে তাদের উদ্ধার করতে আসবে।
প্রায় ২০ মিনিট চেস্টা করার পর আরএমস কারপেথিয়া নামক একটি জাহাজ সিগনাল গ্রহন করে। কিন্তু সমস্যাটা ছিল সেই জাহাজটি ১০৭ কিলোমিটার দূরে ছিল । তাই আরএমস কারপেথিয়া যদি তার সর্বোচ্চ গতিতেও টাইটানিকে অভিমুখে যায় তাও সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগে যাবে এবং ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
বাকি ক্রু সদস্যরা আকাশে রকেট ও ফ্লেয়ার জ্বালান এই আশায় আশেপাশে যদি কোন জাহাজ থাকে তাহলে তাদের দৃষ্টিগোচর হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আরএমস কারপেথিয়া ছাড়া আর কোন জাহাজ থেকে কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি।
কোন দিকে থেকে সাহায্য না পাওয়ায় জাহাজের ক্যাপ্টেন স্মিথ ঘোষনা দেন জাহাজ থেকে লাইফবোটের মাধ্যমে। প্রটোকল অনুসারে লাইফবোটে মহিলা ও বাচ্চাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে ।
জাহাজে অবস্থানরত যাত্রীদের তখনও লাগছিল যে টাইটানিক ডুববে না। যার ফলে যখন প্রথম লাইফবোটে ৬৫ জনের ধারনক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২৮ জন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে একের পর এক বগি পানিতে ভরতে থাকে এবং জাহাজটি কাত হতে থাকে। তখন আস্তে আস্তে লোকজন বুঝতে শুরু করে টাইটানিক ডুবতে চলেছে তখন তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায় এবং একটি চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
রাত ১.০০ দিকে সামনের দিকের বগিতে পানি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে জাহাজের জাহাজের অগ্রভাগ(Bow) ডুবতে শুরু করে। ফলে জাহাজের পেছনের অংশটি পানির উপর উঠে যায় এবং জাহাজটি কাত হয়ে যায় ফলের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। যাত্রীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে যায় লাইফবোটে আগে ওঠার জন্য।
কিন্তু সমস্যা ছিল জাহাজে মাত্র ২০টি লাইফবোট ছিল। সেই লাইফবোট দিয়ে মাত্র ১২০০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব ছিল কিন্তু জাহাজে ২২০০ এর মত যাত্রী ছিল।
রাত ২.০৫ মিনিটে পানিতে শেষ লাইফবোট নামানো হয় কিন্তু জাহাজে তখনও ১৫০০ জন ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে রাত ২.২০ দিকে জাহাজটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে পানিতে ডুবে যায়।
সর্বমোট ৩ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি সমুদ্রের পানিতে বিলীন হয়ে যায়। যে ১৫০০ জন জাহাজে ছিলেন তারা হয় জাহাজের সাথে সাথে পানিতে ডুবে গিয়েছেন ।
যারা সাঁতার জানতেন তাদেরও বাচার কোন উপায় ছিল না কারন পানির তাপমাত্র মায়নাস ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল । আর এই তাপমাত্রায় যদি কেউ পানিতে নামে তাহলে কিছু সময়ের মধ্যে মৃত্যু ঘটবে ঠান্ডা লেগে হাইপোথারমিয়ার জন্য।
জাহাজের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। অন্যদিকে কিছু লোকের মতে উনি আত্নহত্যা করেছেন।
আরএমস কারপেথিয়া নামক যেই জাহাজটি টাইটানিককে বাচানোর জন্য আসছিল সেটি ৩.৩০টা থেকে ৪টার মধ্যে ১ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছে । লাইফেবোটের মাধ্যমে যারা জাহাজ বেচে ফিরেছিলেন সেই ৭০৫ জনকে বাচিয়ে দেয় সফলতার সাথে।
ওই রাতে টাইটানিক থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে একটি জাহাজ ছিল যেটি খুব সহজেই সময়ের ভেতর পৌঁছে যাত্রীদের বাচাতে পারত। সেই জাহাজের নাম ছিল এস এস ক্যালিফোর্নিয়া।
টাইটানিকের সাথে বরফের পাহাড়ের ধাক্কার ঠিক এক ঘণ্টা আগে সতর্কীকরন বার্তা এই এস এস ক্যালিফোর্নিয়া কাছে থেকে এসেছিল। বার্তাতে বলা হয়েছিল সাবধান থাকার জন্য সমুদ্রে অনেকগুলো বরফের পাহাড় আছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এরপর রাত ১১.১৫টা দিকে সেই জাহাজের রেডিও সিগনাল বন্ধ করে দেয় কারন তারা সমুদ্রে সামনের দিকে যেতে চাইছিল না বিপদের কথা বিবেচনা করে।
রেডিও বন্ধ থাকার কারনেই কেউ এস এস ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সিগনাল গ্রহণ করেনি। এই জাহাজটি টাইটানিকের এতটাই কাছাকাছি ছিল যে যারা জাহাজের সামনের দিকে ছিলেন তারা সেটিকে দেখতে পাচ্ছিলেন।
টাইটানিকের অফিসাররা যখন যাত্রীদের লাইফবোটের মাধ্যমে পাঠাচ্ছিলেন তখন একজন অফিসার বলে ওঠিছিলেন ‘যে দেখো ওই একটি জাহাজ দেখা যাচ্ছে , এটি আমাদের বাচাতে আসবে তাই চিন্তা করার কোন কারন নেই’।
এস এস ক্যালিফোর্নিয়া তখনও যায়নি যখন তারা আকাশে রকেট ওড়াতে দেখে। রাত ১২টার দিকে সেই জাহাজের ক্রু সদস্যরা রকেট দেখে তাদের ক্যাপ্টেন স্টেনলি লর্ডকে অবহিত করেন ।
কিন্তু ক্যাপ্টেন এই বলে নাকোচ করেন যে এটি কোন ডিস্ট্রেস সিগনাল না বরং টাইটানিকে ধনী ব্যাক্তিরা পার্টি করছেন এবং সেজন্য তারা রকেট ওড়াচ্ছেন।
টাইটানিক জাহাজ সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য
১। মোট যাত্রীদের মধ্যে মাত্র ৩৭ শতাংশ বেঁচে ফিরতে পেরেছেন। যাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের মধ্যে ৪২ শতাংশ বেঁচে গেছেন। অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে কম ২৪ শতাংশ যাত্রী বেঁচে গিয়েছিলেন।
২। টাইটানিক যে আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল সেটি পানির ৫০ থেকে ১০০ ফুট উপরে ছিল বলে অনুমান করা হয়। পুরো আইসবার্গটি ২০০ থেকে ৪০০ ফুট লম্বা বলে মনে করা হয়। যা উচ্চতায় টাইটানিক থেকে অন্তত দুই থেকে তিন গুন বড়।
৩। ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ যখন বুজতে পারলেন টাইটানিকের ডুবা অনিবার্য তখন তিনি যাত্রীদের লাইফবোটের মাধ্যমে জাহাজ থেকে বের করার ঘোষনা দেন। কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগের তখনও ধারনা ছিল যে টাইটানিক ডুববে না তাই তারা লাইফবোটের মাধ্যমে যেতে অনেকে রাজী হননি। আর সেজন্য লাইফবোট ধারন ক্ষমতা থেকে অর্ধেক পরিমান যাত্রী ওঠেন, বিশেষ করে শুরুর দিকে। লাইফবোটে থাকা সমস্ত জায়গা ব্যবহার করা হলে বোর্ডে থাকা অর্ধেকেরও বেশি লোককে বাঁচানো যেত।
৪। মিল্টন হার্শে টাইটানিকের ঐতিহাসিক যাত্রায় থাকার কথা ছিল। মিল্টন হার্শে, যিনি বিখ্যাত হার্শির মিল্ক চকলেট বার আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি আরএমএস টাইটানিকের স্টেটরুম রিজার্ভ করার জন্য ৩০০ ডলারের চেকও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবসার কাজের জন্য হার্শে এবং তার স্ত্রী যাত্রাটি যেতে পারেননি।
৫। টাইটানিকের চারটি ফানেলের মধ্যে মাত্র তিনটি কাজ করেছে। মজবুত জাহাজের চারটি ফানেল আংশিকভাবে দেখানোর জন্য ছিল । অতিরিক্ত ফানেলটি নিছক বায়ুচলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল এবং জাহাজটির সৌন্দর্য্য বর্ধনই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
৬। আইসবার্গে আঘাত হানার এক ঘণ্টা পর প্রথম লাইফবোটের মাধ্যমে যাত্রী প্রেরন করা হয়। এই এক ঘণ্টা টাইটানিকের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথের নেতৃতে জাহাজের ক্রুরা মেম্বাররা রেডিও সিগনাল পাঠানোর সর্বাত্মক চেস্টা করে। কিন্তু টাইটানিকের আশেপাশে কোন জাহাজ ছিল না সিগনাল রিসিভ করার মত। শেষে বাধ্য হয়ে ক্যাপ্টেন স্মিথ লাইফবোটের মাধ্যমে যাত্রীদের জাহাজ থেকে বের করে নেওয়ার সিধান্ত নেন।
৭। টাইটানিকের অভ্যন্তরটি রিটজ হোটেলের আদলে তৈরি করা হয়েছিল, প্রথম-শ্রেণীর কেবিন এবং প্রথম-শ্রেণীর লাউঞ্জটি রাজকীয়ভাবে করা হয়েছিল।
যাত্রীরা যাতে একটি ভাসমান হোটেলের মত আবহ পায় সেই লক্ষ্যে বানানো হয়েছিল। প্রথম শ্রেনীর যাত্রীদের জন্য এমনভাবে বানানো হয়েছে যাতে তারা ভুলে যায় যে তারা একটি জাহাজে বসে আছে। বরং তারা মনে করবে সমুদ্রের ধারে কোন বাড়িতে আছে।
একটি ভাসমান হোটেলের আভা প্রকাশ করার লক্ষ্যে, প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য তারা একটি জাহাজে চড়েছে এবং মনে হবে যেন তারা তীরে একটি দুর্দান্ত বাড়ির একটি হলের মধ্যে রয়েছে তা ভুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
৮। টাইটানিক সম্পর্কে একটি তথ্য হল, বিশ্বাস করুন বা না করুন, টাইটানিক বেলফাস্ট যেকোন সময়ে ৩৪৫৭ জনের বেশি দর্শক ধরে রাখতে পারত। যা টাইটানিকের মোট ধারণক্ষমতার সমান!
৯।. ১৯১১ সালের ৩১ মে বেলফাস্টে প্রায় ১০০,০০০ লোক জাহাজের উদ্ভোদনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল যখন বিশাল হোয়াইট স্টার লাইনারটি প্রথমবার জলে প্রবেশ করেছিল। যা বেলফাস্টের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ।
১০। টাইটানিকের দৈর্ঘ্য ৮৮২ ফুট এবং ৯ ইঞ্চি ছিল, যা এটিকে তার সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজের মর্যাদা দিয়েছিল। আজ, সবচেয়ে বড় জাহাজ হল রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের সিম্ফনি অফ দ্য সিস, প্রায় ১২০০ ফুট লম্বা।
১১। টাইটানিকের প্রধান শেফ চার্লস জঘিন উদ্ধারের আগে দুই ঘন্টা মাইনাস ২ ডিগ্রী তাপমাত্রায় জলের মধ্যে ছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগে তিনি প্রচুর পরিমাণে হুইস্কি খেয়েছিলেন যা তার শরীরকে যথেষ্ট গরম রেখেছিল।
১২। জাহাজটি প্রতিদিন আনুমানিক ৮২৫ টন কয়লা পুড়িয়েছে। টাইটানিকের ওজন প্রায় ৪৬০০০ টন। একটি জাহাজের এই বেহেমথ ২৯টি বয়লারকে উত্তপ্ত করে ১৫৯ চুল্লিতে প্রতিদিন ৮২৫ টন কয়লা পুড়িয়েছে।
১৩।. জাহাজটি নির্মান করতে সেই সময় ৭.৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়েছে।যা আজকের ১৮৩.৪ মিলিয়ন ডলারের সমান হবে।
১৪। দুর্ঘটনার পর মাত্র কয়েকশ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ বরফের পানি থেকে মাত্র ৩০৬টি লাশ উদ্ধার করেছে। নিহতদের অনেককে নোভা স্কটিয়ার হ্যালিফ্যাক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
১৫। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের রাত ১১টার সময় শেষ খাবার দেয়া হয়। মেনুতে ঝিনুকের মতো হর্স ডি’ওউভার্স, ফাইলেট মিগননের মতো প্রধান কোর্স এবং চকোলেট এবং ভ্যানিলা ইক্লেয়ারের মতো মিষ্টি ছিল।
টাইটানিক জাহাজ ডুবতে কত সময় লেগেছিল?
জাহাজটি খুব দ্রুত মাত্র তিন ঘন্টার ভেতর সমুদ্রের পানিতে ডুবে যায় । জাহাজটি ডুবার আগে দুই ভাগে ভেঙ্গে যায়, এবং জাহাজের অগ্রভাগ ( Bow) সমুদ্রের তলদেশে আনুমানিক ৩৫ মাইল বেগে প্রতি ঘণ্টায় ডুবে যায় এবং জাহাজের পশ্চাৎভাগ (Stern) আনুমানিক ৫০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে নেমে আসে।
টাইটানিক জাহাজ কবে ডুবে যায়?
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল রাত ২.২০ মিনিটে, কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দক্ষিণে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ মহাসাগরের লাইনার টাইটানিক ডুবে যায়।
টাইটানিক জাহাজ বানাতে মোট কত টাকা খরচ হয়েছিল?
তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওমদায়ক এই জাহাজটি তৈরি করে হোয়াইট স্টার লাইন নামক যুক্তরাজ্য ভিত্তিক শিপইয়ার্ড কোম্পানি।
টাইটানিকের দৈর্ঘ্য ছিল ২৬৯ মিটার এবং প্রস্থ ৫৩ মিটার । টাইটানিক বানাতে মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার। আপনি যদি বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুসারে বিবেচনা করেন তাহলে তা ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৩৫১৯ কোটি টাকা ।
টাইটানিক জাহাজের ভেতর কি কি সুযোগ সুবিধা ছিল?
টাইটানিক জাহাজের ভেতর যে সুযোগ সুবিধা ছিল তা অনেক ৫ স্টার হোটেলো সেই রকম থাকেনা। এই ধরুন জাহাজের জানালা বানানো হয়েছিল স্টেইন্ড গ্লাস দিয়ে, দুটি বড় বড় সিড়ি ,অলঙ্কৃত কাঠের প্যানেলিং, উত্তপ্ত সুইমিংপুল, টার্কিশ বাথটাব, ইলেক্ট্রিক বাথ, একটি জিম, একটি স্কোয়াস কোর্ট, চারটি রেস্টুরেন্ট, দুটি সেলুন, একটি লাইব্রেরী।
টাইটানিক জাহাজ কোন উদ্দেশ্যে নির্মান করা হয়েছিল?
যদিও টাইটানিক ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ধনী এবং বিখ্যাতদের বহন করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, তবে জাহাজটির আসলে বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল:
যাতে খুব সহজেই বিট্রিশ এবং মার্কিন মেইল বহন করা যায় সেজন্য জাহাজটির পুরো নাম রয়্যাল মেইল শিপ । সংক্ষেপে আরএমএস।
ইউরোপ তাদের প্রয়োজন মেটানোর মতো পর্যাপ্ত গবাদিপশু উৎপাদন করতে পারতো না।আর টাইটানিকের মাধ্যমে খুব সহজে রপ্তানি করা সম্ভব ছিল। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও এই জাহাজের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানো যেত।
প্রথম-শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য দারুণ এক বিলাসিতার উপলক্ষ, অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের আরামে এবং তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের সাশ্রয়ী মুল্যে বহন করার জন্য খুবই উপযোগী ছিল টাইটানিক।
গ্রেট ব্রিটেনের পতাকা বিদেশের মাটিতে ওড়ানো এবং জাতীয় সম্মান সমুন্নত রাখা।
যদিও টাইটানিক শেষ পর্যন্ত আমেরিকান ব্যবসায়িক স্বার্থের মালিকানাধীন ছিল, জাহাজটি একটি ব্রিটিশ ইয়ার্ডে নির্মিত হয়েছিল, ব্রিটিশ প্রজাদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, ব্রিটিশ ক্রুদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল এবং জনসাধারণ একটি ব্রিটিশ জাহাজ হিসাবেই জানত।
টাইটানিক কত বড় ছিল? জাহাজে কতজন ক্রু ছিল?
লম্বায় টাইটানিক ৮৮২ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ছিল ৯২ ফুট ৬ ইঞ্চি । টাইটানিকের ওজন ছিল ৪৬,৩২৯ টন বা ৪২০২৮৯৬২ কেজি।
টাইটানিক জাহাজ কে তৈরি করেছিলেন?
আরএমএস টাইটানিক বেলফাস্ট-ভিত্তিক একটি জাহাজ নির্মাতা হারল্যান্ড এবং উলফ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এর মালিকানা ছিলে হোয়াইট স্টার লাইন এর কাছে।
জাহাজটির প্রধান নৌ-স্থপতি ছিলেন টমাস অ্যান্ড্রুজ এবং তিনি টাইটানিকের ডিজাইন করেন। ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত জোসেফ ব্রুস ইসমে হোয়াইট স্টার লাইনের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং আমেরিকান জেপি মরগান এই জাহাজ বানাতে অর্থের যোগান দিয়েছিলেন।
কেন বলা হয়েছিল টাইটানিক ডুবা সম্ভব না এবং গল্পটি কোথা থেকে এসেছে?
জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে টাইটানিককে ” কার্যতভাবে ডুবা সম্ভবনা” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এটি অস্বাভাবিক ছিল না – কয়েক দশক ধরে, পানিঘটিত দুর্ঘটনার দ্বারা ঝুকি সীমিত করার জন্য জাহাজগুলিতে জলরোধী বগি ছিল, এবং প্রেসগুলি বহু বছর ধরে এই শব্দগুচ্ছটিকে রুটিন হিসাবে ব্যবহার করে আসছিল।
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরে, তার ক্ষতির গল্পটি একটি আধুনিক কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছিল এবং গল্পের নৈতিকতাকে তীক্ষ্ণ করার জন্য মূল বর্ণনাটি “ব্যবহারিকভাবে ডুবতে পারে না” কেবল “অসিঙ্কেবল” হয়ে ওঠে। ১৯১২ সালে কোন শিক্ষিত ব্যক্তিই বিশ্বাস করেননি যে টাইটানিক সত্যিই ডুবা যায় না, তবে তাকে নীচে পাঠানোর জন্য যথেষ্ট গুরুতর দুর্ঘটনা কল্পনা করা কঠিন ছিল।
শেষ কথা
টাইটানিক ডুবার পর জাহাজের চলফেরা করার নীতিমালাতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। মূলত অনাকাংখিত দুর্ঘটনা এড়াতেই সেই রকম করা হয়েছে। উনবিংশ শতাব্দিতে জাহাজ শিল্পের বিবর্তন হলেও মূলত টাইটানিক ডুবার পরেই যাত্রীদের সুরক্ষা ব্যাপারটাকে আরোও গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।