প্রয়োজনে সিট পাওয়া না গেলেও লোকসানের বোঝায় কাহিল দেশীয় বিমান সংস্থা
অনলাইন ডেস্কঃ
করোনা মহামারির কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে ও যাত্রীর অভাবে দেশীয় বিমান সংস্থাগুলো ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে লোকসান আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ তীব্র হলে এ অঙ্ক আরও বাড়বে।
করোনাকালে আর্থিক ক্ষতির এই হিসাব দিয়েছে সরকারের মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
জানা গেছে, করোনাকালের আগে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে প্রতিদিন দেড় শর মতো ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এই চারটি এয়ারলাইনস বছরে ৫০ লাখের মতো যাত্রী বহন করে। চলতি বছর আরও বেশি যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তাদের। এ জন্য বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করা ও ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল।
কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে গেছে। বর্তমানে দেশীয় এই চার সংস্থার মোট ৪৫টি উড়োজাহাজ আছে। বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় সুপরিসর উড়োজাহাজগুলো অধিকাংশ সময় অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। আর বেসরকারি সংস্থার মধ্যে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ নানা সংকটে পড়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে।
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, তাঁদের চলতে হচ্ছে লোকসান গুনে গুনে। তিনি বলেন, করোনাকালে দেশের বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে নভোএয়ারের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকার বেশি।
জুলাইয়ে বিমানের পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের সক্ষমতার ব্যবহার না হওয়াজনিত ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিমানের ক্ষতি ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।
মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারকে অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জ মওকুফের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে আশ্বাস পাওয়া গেছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জ্বালানি সহনীয় দামে পাওয়া যাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের জন্য দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোর অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জ মওকুফ করতে বেশ কিছুদিন আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, শিগগিরই চার্জ মওকুফ করা হবে। তা ছাড়া ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো। এ ক্ষেত্রে তাদের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ দেবে সরকার।
করোনার কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সীমিত হয়ে যায় আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইটও। ১ জুন থেকে অভ্যন্তরীণ তিন গন্তব্যে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু হয়। জুলাই থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চালু হলেও যাত্রী মিলছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। দেশের চার বিমান সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমান।
বিমান সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। ইউরোপের করোনা পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে ফ্লাইট চলছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কিছু কিছু ফ্লাইট চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে টিকে থাকতে হলে দেশীয় সংস্থাগুলোর নীতি-পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে।
এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বেবিচক চেয়ারম্যান
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, জুলাইয়ে বিমানের পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের সক্ষমতার ব্যবহার না হওয়াজনিত ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিমানের ক্ষতি ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।
দেশীয় বিমান সংস্থাগুলো বাঁচলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও (বেবিচক) বাঁচবে। এ জন্য দেশের বিমান সংস্থাগুলোকে নানাভাবে সাহায্য করা হচ্ছে বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। তিনি বলেন, বিমান সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। ইউরোপের করোনা পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে ফ্লাইট চলছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কিছু কিছু ফ্লাইট চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে টিকে থাকতে হলে দেশীয় সংস্থাগুলোর নীতি-পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে।