বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় জার্মানি যেতে যা করনীয়
অনলাইন ডেস্কঃ
বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অন্যতম জার্মানি। তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রসরমাণ এই দেশ শিক্ষাসহ নানা দিক দিয়ে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয়। বিশেষ করে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী। রয়েছে বিশ্বের অনেক নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়। জার্মানির বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখের মধ্যে ১২ শতাংশের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। জার্মানিতে পড়াশোনা নিয়ে প্রথম পর্ব আজ পড়ুন
উচ্চশিক্ষার জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্যতম গন্তব্য ইউরোপের জার্মানি। শিক্ষা ও গবেষণা, টিউশন ফি, শিক্ষাবৃত্তির সুবিধাসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা জার্মানি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি বেছে নেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে পিছিয়ে নেই।
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গভর্ন্যান্স, পলিটিক্যাল সায়েন্স, অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস, অ্যাডভান্সড অনকোলজি, কমিউনিকেশন টেকনোলজি, এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ফিন্যান্স, মলিকিউলার সায়েন্স, বিভিন্ন ভাষা বিষয়ে পড়াশোনা, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার সায়েন্সসহ প্রকৌশল ও জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
শুরুতেই জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রেডিং সিস্টেমের একটু ধারণা দিচ্ছি। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট সিস্টেমে সিজিপিএ-১ হচ্ছে সব থেকে ভালো গ্রেড এবং সিজিপিএ-৪ হচ্ছে সব থেকে খারাপ গ্রেড। সিজিপিএ-৫-কে সাধারণত ফেল বলে গণ্য করা হয়। সাধারণত প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সাধারণ রিকয়ারমেন্ট থাকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ-২.৫। অর্থাৎ কোনো শিক্ষার্থীর সিজিপিএ-২.৫-এর কম হলেই প্রাথমিকভাবে ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এখন আপনি কীভাবে বুঝবেন জার্মান স্কেলে আপনার গ্রেড কত? এর জন্য নিচের সূত্র ব্যবহার করে নিজের রেজাল্ট জার্মান স্কেলে বের করে নিতে পারেন। পদ্ধতিটির নাম মোডিফায়েড বাভারিয়ান ফর্মুলা।
Modified Bavarian formula=
(Nmax-Nd)/(Nmax-Nmin)*3 + 1.
এখানে; Nmax: সর্বোচ্চ নম্বর, Nmin: পাস নম্বর ও Nd: প্রাপ্ত গড় নম্বর।
ধরা যাক, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট সিস্টেমে সর্বোচ্চ গ্রেড ৪.০। পাসের জন্য ন্যূনতম গ্রেড দরকার ছিল ২.০। এদিকে ব্যাচেলরে আপনার প্রাপ্ত সিজিপিএ-৩.৫১। তাহলে আপনার জার্মান স্কেলে গ্রেড দাঁড়াবে (৪-৩.৫১)/(৪-২)*৩+ ১= ১.৭৩ (১.৭)। এখানে দেখা যাচ্ছে, সিজিপিএ-১.৭, যা কিনা ২.৫-এর নিচে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে আপনি ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত।
এখন কথা হচ্ছে এত দেশ রেখে কেন জার্মানিতে পড়তে যাবেন? জার্মানিকে বলা হয় ল্যান্ড অব আইডিয়াস। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীতে যত জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হয়েছে, সেসবের অন্যতম তীর্থস্থান হচ্ছে জার্মানি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নামীদামি বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে পৃথিবী বিখ্যাত মনীষীদের অনেকেরই জন্মভূমি ও কর্মস্থল জার্মানি। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে যত রকমের টেকনোলজি আছে, তার অনেকগুলোর গবেষণা ও উন্নয়ন হচ্ছে জার্মানিতে। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ জার্মানি। এর বিশেষ কারণ হচ্ছে, জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ধরতে গেলে সম্পূর্ণ বিনা খরচে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা হয়। এমনকি পরীক্ষার ফিসের জন্যও শিক্ষার্থীদের কোনো অর্থ দিতে হয় না। শিক্ষার্থীকে শুধুই তাঁর বাসস্থানের ও দৈনন্দিন খরচ জোগাতে হয়, যা কিনা স্টুডেন্ট জব করেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিকে ধরা হয় সবচেয়ে কম খরচে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। আমাদের মতো দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী জার্মানিতে পড়তে যান, তাঁদের জন্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে ধাপগুলো থাকে, তার মধ্যে মাস্টার্স থেকে শুরু করাই এ ক্ষেত্রে আদর্শ বলে অন্তত আমি মনে করি।
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে লাগে চার সেমিস্টার (দুই বছর), যার মধ্যে তিন সেমিস্টারে বিভিন্ন বিষয়ের থিওরি ও ব্যবহারিক পাঠদান করা হয়। বাকি একটি সেমিস্টারে থাকে থিসিস। এ ক্ষেত্রে পছন্দের নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রফেসর নির্বাচন করে তাঁর অধীনে ছয় মাসের থিসিস করে যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান লাভ করা হয়। ভবিষ্যতে চাকরি বা ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য ওই বিষয়ই বেছে নিতে হয়।
এখানে উল্লেখ্য, থিসিস চলাকালে অনেক প্রফেসর তাঁর শিক্ষার্থীকে পারিশ্রমিকও দিয়ে থাকেন, যার পরিমাণ শহর ও ফান্ড সিস্টেমভেদে ২০০ থেকে ৯০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। মাস্টার্স শেষ করে আপনি ফুলটাইম জব করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার দক্ষতা মোটামুটি জবভেদে ভালো হতে হবে। এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমে ফুল পেইড বা হাফ পেইডে বৈজ্ঞানিক গবেষক পদে পিএইচডিও করতে পারবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
বাংলাদেশে যেকোনো নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছরের ব্যাচেলর শেষ করেই মাস্টার্সের জন্য আবেদন করা যায়। আবেদন করার আগে প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেকে যাচাই করা। এ ক্ষেত্রে অতি আবেগকে দমিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচার করবেন যে আন্তর্জাতিক মানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য নিজে কতটুকু যোগ্য এবং সেখানে ভাষা ও সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবেন। বিষয়টা প্রথমেই বিচার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার কিছু বেসিক মাপকাঠি উল্লেখ করে দিচ্ছি। ব্যাচেলরের রেজাল্ট যদি ক্লাস সিস্টেম হয়, এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি (ফার্স্ট ক্লাস) থাকা আবশ্যক। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ নম্বর হলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়। যদি গ্রেডিং সিস্টেমের রেজাল্ট হয়, তাহলে ন্যূনতম সিজিপিএ-৩.০ (৪.০) হলে চান্স পাওয়া সহজ হয়। ব্যাচেলরের পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি হলে এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জনসহ অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তারপরও নিজে চর্চা ও IELTS স্কোর ভালো হলে এই সমস্যা কাটিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।