বাইকে আগুন দেয়ার দেয়া রাইডার শওকত আলমের নেপথ্যর কাহিনী
মোটরবাইক চালক শওকত আলম সোহেল করোনাকালের আগে ছিলেন ব্যবসায়ী। আয় ভালো হওয়ায় ছিলো সুখের সংসার। কিন্তু করোনার ছোবলে অন্য হাজারো ব্যবসায়ীর মতো ধস নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে কেনেন একটি মোটরসাইকেল।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাও এর মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করে শুরু হয় নতুন জীবনযুদ্ধ। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ বারবার মামলা দেয়ায় হয়ে ওঠেন তিক্ত-বিরক্ত। শেষমেশ সোমবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় আবারো সার্জেন্ট মামলা দিতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে জীবীকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বাইকটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সোহেল। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়। বাইক আগুনে পেড়ানোর ভিডিও এক পথচারী ফেসবুকে শেয়ার করলে মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। মানুষ কতটা বিরক্তির পর্যায়ে পৌছালে এমনকি করতে পারে সে বিষয়েই বেশি মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা।
রাজধানীতে মোটরসাইকেলে ‘মামলা দেওয়ায়’ নিজেই নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রতিবাদের ঘটনায় সেই ব্যক্তিকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ময়মনসিংহের আনসারুল হক নামে এক স্কুল শিক্ষক।
এদিকে, বাইকে আগুন দেয়ার ঘটনাকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)।
রাইড শেয়ার চালকদের কর্মবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিআরডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, হয়রানির জন্য একজন চালক তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনাও যদি পুলিশকে নাড়া না দেয়, তাহলে কি আত্মহুতি দিলে তাদের বিবেক নাড়া দেবে? তিনি বলেন, গাড়ি কোথাও ব্রেক করলেই সেখানেই ধরে ফেলে ট্রাফিক পুলিশ। সরকার আমাদের জায়গা নির্ধারণ করে দিক। তাহলে আমরা যত্রতত্র দাঁড়াবো না।
জানা গেছে, বাইকে আগুন দেয়া চালক সোহেলের বাড়ি কেরানীগঞ্জে। করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে তিনি স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। এতে তার লোকসান হয়। জীবিকা নির্বাহে শওকত দুই মাস ধরে বাইকে যাত্রী পরিবহন করতেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাইকে আগুন দিয়ে সোহেল উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তখন সোহেল এসে তাকেই বাধা দেন। বলেন, কেউ যাবেন না, আপনারা কেউ যাবেন না’ অন্য একজন সোহেলকে বলেন, ভাই মাথা ঠান্ডা করেন।
এদিকে রাজধানীতে ‘মামলা দেওয়ায়’ নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রতিবাদের ঘটনায় সেই ব্যক্তিকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ময়মনসিংহের আনসারুল হক নামে এক স্কুল শিক্ষক। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে আনসারুল হক এ ঘোষণা দেন।
স্ট্যটাসে তিনি লিখেছেন, আজকে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে আমরা সবাই জানি। এক ভাই মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে রাগে ক্ষোভে তার একমাত্র আয়ের উৎস পাঠাও চালানোর মোটরবাইকটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছেন যা আদৌ ঠিক হয়নি। হয়তো রাগ কমে যাওয়ার পর এখন খুবই অনুশোচনা হচ্ছে! যাই হোক, আমার এই বাইকটি তাকে আপাতত গিফট করে দিতে চাচ্ছি। এমনও হতে পারে এই পাঠাও চালানোর মোটরবাইক থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসারের খরচ মেইনটেইন হতো। আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে যাচ্ছি না, বিষয়টা আপাতত মানবিক বিষয় হিসেবে ধরে নিন।
আনসারুল লিখেছেন, মাহবুব কবির মিলন স্যার এই মর্মে একটা পোস্ট করেছেন, সেখানে আমি কমেন্ট করেছিলাম কিন্তু রেসপন্স পাইনি! আর আমার ফ্রেন্ড ফলোয়ারদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকেন যে আপনারাও কোনো কন্ট্রিবিউট করতে চাচ্ছেন যাতে করে তাকে আরও ভালো বাইক কিনে দেওয়া যায়, তাহলে আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (+8801737005708) যোগাযোগ করতে পারেন। কমেন্টেও রেসপন্স করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ওই ভাইয়ের সাথে আমাদের কমিউনিকেট করিয়ে দিতে সহযোগিতা করুন যাতে করে আমরা তার কাছে পৌঁছাতে পারি।
সবশেষ তিনি সবার প্রতি আইনের সমান দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রয়োগ কামনা করে লিখেছেন, ‘আইন সবার জন্য সমান’ এই শ্লোগান শুধু বাক্য আর কথায় সীমাবদ্ধ না থাকুক, বাস্তবে যেন সেটি প্রমাণ হয়, এই প্রত্যাশা সবার।