বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও পড়লেখার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বৃষ্টি বুনার্জি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই চা–বাগানের শ্রমিক কলোনিতে বড় হয়েছেন বৃষ্টি বুনার্জী। তাঁর বাবা চা–বাগানের শ্রমিক, মা গৃহিণী। দরিদ্র পরিবারে বড় হলেও পড়াশোনায় বরাবরই এগিয়ে ছিলেন বৃষ্টি। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি—সব পরীক্ষাতেই জিপিএ–৫ পেয়েছেন।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চা বাগানের ছেলে মেয়েরা পড়ালেখার দিকে থেকে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে। কিন্তু বৃষ্টি সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্যে পড়াশুনা করেও ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।
এবার ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে।সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে সন্তানের উচ্চশিক্ষার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় বৃষ্টির মা–বাবা। তাঁদের আরেক সন্তান শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।
বৃষ্টির মা সেতকী বুনার্জী বলেন ‘আমার মেয়ে পড়াশোনায় সব সময়ই ভালো। আমরা খেয়ে না খেয়ে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছি। ভর্তির আবেদন করার সময় আমাদের কাছে টাকা ছিল না। বাড়িতে একটি গরু ছিল, সেটি বিক্রি করেছি। মেয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেল, তখন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তাকে ভর্তি করিয়েছি। শ্রীমঙ্গল থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া, থাকা-খাওয়া, পড়াশোনার খরচ সব মিলিয়ে অনেক টাকা। সেই টাকা কীভাবে জোগাড় করব? সামনের দিনগুলো নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।’
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আগ্রহ। বৃষ্টি বুনার্জী বললেন, ‘অভাব–অনটনে দিন কাটলেও পরিবারের লোকজন আমাকে পড়াশোনার জন্য সব সময়ই সহযোগিতা করেছে। আমার স্বপ্ন ছিল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে চিকিৎসক হওয়ার। সে সুযোগ পাইনি। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আমি খুশি। ভর্তির আবেদন থেকে শুরু করে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত অনেক খরচ হয়ে গেছে। সেটাও অনেক কষ্টে মা–বাবা ব্যবস্থা করেছেন। আগামী দিনগুলোতে কীভাবে খরচ চালাব, সেটা নিয়ে আমার পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তায় আছেন। পড়ার খরচ জোগাড় করতে না পারলে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেবে না।