বিয়ানীবাজার গজারাই গ্রামের হিফজুর হত্যা মামলার মূল আসামী এখনো অধরা

স্টাফ রিপোর্টার
বিয়ানীবাজারের হিফজুর রহমান হত্যা মামলার মূল আসামী নাজিম উদ্দিন এখনো অধরা। ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

তবে পুলিশ বলছে- নাজিমকে গ্রেপ্তারে তারা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এদিকে আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিহত হিফজুর রহমানের পরিবারে বিরাজ করছে নানা শঙ্কা।

পরিবার বলছে- খুনের ঘটনাটিকে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছে ঘাতকের সহযোগীরা। তাদের নানাভাবে দেয়া হচ্ছে হুমকিও। সিলেটের বিয়ানীবাজারের গজারাই গ্রামের বাসিন্দা হিফজুর রহমান। তিনি এক সময় মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছিলেন।

পারিবারিক ও জমি সংক্রান্ত বিষয়ে হিফজুরের পরিবারের সঙ্গে নাজিম উদ্দিনের পরিবারের বিরোধ চলছিলো। এই বিরোধের কারণে আগেও কয়েক বার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এলাকার লোকজন সালিশের মাধ্যমে তাদের বিরোধের নিষ্পত্তি করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩শে এপ্রিল বিকালে বাড়ির পার্শ্ববর্তী গজারাই হাওরে কৃষি কাজের জন্য যান হিফজুর রহমান। এ সময় তারই চাচাতো ভাই নাজিম উদ্দিন, হারুনুর রশীদ, ফায়েক আহমদ ও চাচা নুর মিয়া লোহার শাবল ও লাঠিসোটা নিয়ে তার ওপর হামলে পড়ে। তার ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখে স্বজনরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত হন হিফজুর রহমান। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন হিফজুর। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো।

স্বজনরা জানিয়েছেন, ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউ সাপোর্ট খালি না থাকায় তাকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার পর নিউরো সার্জনরা তার মাথায় অস্ত্রোপচার করেন। জীবন রক্ষার্থে দ্বিতীয় দফা তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হলে আর জ্ঞান ফেরেনি হিফজুর রহমানের। ঈদের তিনদিন আগে গত ১১ই মে হিফজুর রহমান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এদিকে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনার দিনই বিকালে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে হামলাকারী হারুনুর রশিদ ও তার পিতা নুর মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। রাতে নিহত হিফজুরের স্ত্রী লেবু বেগম বিয়ানীবাজার থানায় মামলা করেন।
নিহতের স্ত্রী লেবু বেগম জানিয়েছেন, তার স্বামীকে হত্যার ঘটনায় তিনি আদালতে মামলা দাখিল করবেন। ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত হচ্ছে নাজিম উদ্দিন। সে হচ্ছে স্বামী হিফজুর হত্যা ঘটনার মূল নায়ক। নাজিম উদ্দিন আগেও একাধিকবার তার স্বামীকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, হিফজুরের ওপর হামলার ঘটনার পর এলাকার মানুষ বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা চালান। এমনকি তারা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ঘটনাটি শেষ করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে পরিবারকে মামলা না করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এরপরও ঘটনার বিষয়টি জানিয়ে হিফজুরের পরিবারের পক্ষে স্ত্রী লেবু বেগম বিয়ানীবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। আর হিফজুর রহমান মারা যাওয়ার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

হিফজুর রহমান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিয়ানীবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. কবির উদ্দিন জানিয়েছেন, হিফজুর রহমান মারা যাওয়ার আগে মামলা রেকর্ড করা হয়েছিলো। তিনি মারা যাওয়ার পর পুলিশ বিলম্ব না করেই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন পুলিশের মূল টার্গেটে রয়েছে ঘটনার মূল হোতা নাজিম উদ্দিন। তাকে গ্রেপ্তারে ইতিমধ্যে পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চলছে। তিনি বলেন, নাজিম উদ্দিন সহ পলাতক থাকা আসামিরা গ্রেপ্তার হবে। তারা পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাবে না। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত চলছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের বাইরে দুই পরিবারের মধ্যে নাজিম উদ্দিনকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।

নিহতের ছোট ভাই প্রবাসী আবু আহমদ জানিয়েছেন, তারা ন্যায়বিচার চান। টানা ১৭ দিন তারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে ভাইয়ের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারেননি। ঘাতকদের গ্রেপ্তারে তিনি পুলিশের আন্তরিক সহযোগিতা চান।

 

মামলার বাদী লেবু বেগম জানিয়েছেন, মামলার দুই আসামি বাইরে। তারা নানাভাবে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এমনকি তারা হুমকিও অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে তিনি সিলেট জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুনজর কামনা করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *