বিয়ানীবাজারে দুই দিনের সন্তান সাথে নিয়ে এয়াম্বুল্যান্সে বসে পরীক্ষা দিলেন এক মা

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ

এয়াম্বুল্যান্সে বসে পরীক্ষা দিলেন এক মা

মাত্র দু’দিন আগে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তখনো ওই সন্তানের ভিজে নাড়ি কাটা হয়নি। সেই সন্তানকে সাথে নিয়ে জীবনের লক্ষ স্থির করতে উদ্যমী এক মা নিজেই উপস্থিত হলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। সবাইকে জানিয়ে দিলেন, নারী সব পারে! তবে শ্রেণীকক্ষে নয়, এ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। ওই এ্যাম্বুলেন্সে সদ্য ভ‚মিষ্ট সন্তান এবং তার নানী উপস্থিত ছিলেন। নানীর কোলে নাতনি, মায়ের হাতে কলম-এমন এক অদম্য নারীর ইচ্ছাশক্তির গল্প এখন বিয়ানীবাজারবাসীর মুখে-মুখে।

 

জানা যায়, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী ওই মা। উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের কোনাগামে তার বাবার বাড়ি, বিয়ে হয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। স্বামী প্রবাসে থাকলেও স্ত্রীর শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতার বিপরীতমুখী হননি তিনি। গর্ভে সন্তান নিয়ে তিনি চ‚ড়ান্ত বর্ষের অপর একটি বিষয়ে পরীক্ষা দেন। গত শুক্রবার স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি সন্তান প্রসব করেন। রবিবার তার ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরীক্ষা ছিল। একদিকে সদ্য ভ‚মিষ্ট সন্তান অপরদিকে জীবনের লক্ষ স্থির করার মূহুর্ত। কোনটা বেছে নিবেন-এই মা। এমন প্রশ্নের যখন উত্তর খুঁজছেন সবাই তখন ওই মা’ই সিদ্ধান্ত দিলেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের জানান, সন্তান সাথে নিয়ে পরীক্ষা দিবেন।

 

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের সাথে পরীক্ষার আগের রাতে যোগাযোগ করা হয়। সে মোতাবেক আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সদ্য সন্তান জন্মদেয়া মা’র দুতলায় পরীক্ষার হলে যাওয়া কঠিন, তাই আমরা এ্যাম্বুলেন্সে রেখেই তার পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি বলেন, যথাসময়ে ওই ছাত্রী পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হলে আমরা এ্যাম্বুলেন্সে একজন শিক্ষক (মহিলা পরিদর্শক) নিয়োগ করি। প্রশ্নপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে ওই ছাত্রী পুরো চারঘন্টা সময় ব্যয় করে পরীক্ষা দেন। আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।

 

মা হওয়া ওই ছাত্রী পিংকী রাণী পাল (২২) জানান, আমি হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্রে যাই। পরীক্ষা শেষে আবার হাসপাতালে ফিরে আসি। এই সময়ের মধ্যে আমার সন্তান একাধিকবার কেঁেদ ওঠলেও আমি তাকে নিয়ন্ত্রণ করি। এতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। আমি চাই পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকুরী করতে। তাই কোন বাঁধাই মেনে নেইনি। তিনি বলেন, সবকিছুতে আমার স্বামীর সম্মতি ছিল। আসলে পরিবারের সমর্থন না হলে কিছুই করা যায়না।

 

সোমবার রাত থেকে ওই মায়ের পরীক্ষা দেয়ার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে নারীদের শৃংখল ভাঙ্গার মানসিকতাকে বাহবা দিচ্ছেন সকল শ্রেনীপেশার মানুষ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *