বড়লেখায় সমলয় পদ্ধতিতে প্রথম বোরো ফসলের আবাদ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গজবাগ এলাকার জমিতে কৃষকরা এতদিন আমন ও আউশ ফসলের চাষ করে এসেছেন। শুকনো মৌসুমে তারা পাশের ধলছড়ার পানি ব্যবহার করে রবিশস্য করেন। তবে বেশিরভাগ জমিই পতিত পড়ে থাকে। এই প্রথমবার কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে ৫০ একর জমিতে একসাথে একই সময়ে চাষ ও একই সময়ে ফসল কাটার সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে গজবাগ গ্রামের একটি জমিতে বোরো চারা রোপণের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে গজবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী ও বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ।
অনুষ্ঠানে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় কৃষকের কাছে একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার হস্তান্তর করা হয়েছে।
এরপর গজবাগ মাঠে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে হালিচারা রোপণ করা হয়। নতুন প্রযুক্তির এই পদ্ধতি দেখতে মাঠে ভিড় করেন অনেক মানুষ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কৃষকরা সমলয় পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে এগিয়ে এসেছেন। এই প্রকল্পে ৬৬জন কৃষক সম্পৃক্ত হয়েছেন। সমলয় পদ্ধতিতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের হালিচারা ও সার প্রদান করেছে। পরে ধান পাকলে কেটে দেওয়া হবে। এতে খরচ হবে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা। কৃষকরা শুধু হাল চাষ ও সেচের ব্যবস্থা করেছেন। কৃষি বিভাগের এই সহযোগিতায় এক কিয়ার (বিঘা) জমিতে প্রায় তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হবে কৃষকের।
গজবাগ গ্রামের কৃষক লালই মিয়া বলেন, ‘আগে কোনোদিন এই জমিতে বোরো ধানের চাষ অইছে (হয়) না। জীবনের প্রথম আমরা এই মাঠে বোরো ধানের চাষ কররাম। এতে এই মাঠে তিনবার ফসল অইবো (হবে)। কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করায় আমরা যেমন বোরো চাষে আগ্রহী অইছি (হয়েছি)। তেমনি আমাদের অনেক লাভও হবে।’
লালই মিয়া জানিয়েছেন, এক কিয়ার জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। কৃষি বিভাগ হালিচারা, সার ও ফসল কেটে দেওয়ার কারণে প্রতি কিয়ার জমিতে তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। লালই মিয়ার ১০ কিয়ার জমি আছে এই প্রকল্পের মধ্যে।
গজবাগ গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই এলাকায় অনেক অভাবী মানুষ আছে। এই সময়ে তারা বেকার থাকে। বোরো চাষ হওয়ায় এরা এখন কাজ পেয়েছে। মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে, তাতে আগামীতেও এই মাঠে বোরো ধানের চাষ হবে। মাঠ সবুজ থাকবে। তবে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ধলছড়া খনন ও গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে।’
তিনি জানান, তার চার কিয়ার জমিতে বোরো চাষ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘সমলয় পদ্ধতিতে একই সময়ে একই জাতের ধানচারা রোপণ করা হবে এবং একই সময়ে কর্তন হবে। কৃষকরা এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে এগিয়ে এসেছেন। এ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন খরচ কম হবে। শ্রমিক সংকট দূর হবে। কৃষি বিভাগের পর্যবেক্ষণ এবং একই ধরনের পরিচর্যার ফলে ফসল উৎপাদন ভালো হবে। কৃষকের মধ্যে সমবায় ধরনের এই পদ্ধতিটি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘সমলয় পদ্ধতিতে মানুষকে সমবায়মুখী করা হচ্ছে। এতে একটি জমিতে অধিক সংখ্যক ফসল উৎপাদন হবে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে এই পদ্ধতি।’