সালমান শাহ–মৌসুমী শৈশবের বন্ধু ছিলেন? যা বললেন সালমানের মা ও মৌসুমী
বাংলা চলচিত্রের অন্যতম সেরা‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার শুটিং দিয়ে চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও নায়িকা মৌসুমীর পথ চলা শুরু হয়। সেই সিনেমার ৩০ বছর পূর্তি হয়েছে গত শনিবার। আর সেই ছবির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে চিত্রনায়িকা মৌসুমী জানিয়েছেন, সালমান শাহের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। তবে মৌসুমীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী।
মৌসুমীর ভাষ্য, সালমান শাহর সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল তাঁর। তাঁরা তখন খুলনায় থাকতেন। এই পরিচয় প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘ছোটবেলায় ইমন (সালমান শাহর ডাকনাম) আর আমি প্লে গ্রুপ ও নার্সারিতে একসঙ্গে পড়েছি। বাবার চাকরির কারণে ইমনের পরিবার খুলনা সার্কিট হাউসে থাকত। ওই স্কুলে আমার ফুফু ছিলেন টিচার। ফুফুর ছুটি হওয়া পর্যন্ত ইমনদের বাসায় আড্ডা দিতাম। সেও আমাদের বাসায় যাওয়া-আসা করত। ভালো বন্ধুত্ব হয়। এরপর হঠাৎ ওরা ঢাকায় চলে আসে। বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর দেখা হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা থাকে, তা ছবিটি করতে গিয়ে নতুন করে টের পাই। ছবির কাজে আবার নিয়মিত দেখা হয়।’
খুলনার পরে সালমান শাহ ও মৌসুমীর দেখা হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে। পরে তাঁরা শুটিং শুরু করেন। সেখানেও তাঁদের পুরোনো আড্ডা জমে যায়। সে প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘খুব অল্প সময়ে আমাদের সম্পর্ক আবার আগের রূপ নেয়। নিজেদের সবকিছুই একজন আরেকজনকে বলতাম। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে তো পরিচালক সোহান ভাই একপর্যায়ে ভুল বুঝতে শুরু করলেন। তিনি ভাবলেন, আমরা একজোট হয়ে গেছি।’
সালমানের সঙ্গে মৌসুমীর পরিচয় নিয়ে ভিন্ন কথা বলেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। তিনি জানান, সিনেমার শুটিং থেকে ফিরে নিয়মিত মায়ের কাছে গল্প করতেন সালমান। একবার মৌসুমীকে শুটিংয়ের সময় কোলে নিতে গিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন, সেই গল্পও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু এর চেয়ে বেশি মৌসুমীকে নিয়ে তেমন কোনো গল্প থাকত না।
নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর একবার মৌসুমী এসেছিল আমাদের বাসায়। তখনই প্রথম মৌসুমীকে দেখি। এর আগে সিনেমার শুটিংয়ের সময়ও সালমানের মুখে মৌসুমীর কথা তেমন শুনিনি। সেই মৌসুমী এখন বলছে, ইমন তার বাল্যবন্ধু ছিল। খুলনায় তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছে। এটা কবে, কীভাবে আমি জানি না।’
সালমানের মা জানান, মৌসুমী প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলে, খুলনায় সে ইমনের সঙ্গে পড়াশোনা করেছে। নীলা চৌধুরী বলেন, তাদের বয়সের ব্যবধান তো ছয় থেকে সাত বছরের বেশি। তা ছাড়া তিনি সে সময় কখনোই মৌসুমী নামের কাউকে চিনতেন না। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো খুলনায় কোনো স্কুলে পড়েনি। তখন ইমনের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর হবে। ওর বাবার পোস্টিং ছিল সেখানে। আমরা ওকে অনেক দিন পর্যন্ত বাড়িতেই পড়িয়েছি। অনেক বই তার মুখস্থ ছিল। আমার ছেলেকে সবাই পছন্দ করত, সে ভালো গান করত, তাকে দুই-এক দিন হয়তো কোনো স্কুলে শিক্ষকদের অনুরোধে নিয়ে গিয়েছি, এই যা। আমাদের বাড়িতে অনেকেই তখন আসতেন। সবাইকে তো চেনা সম্ভব নয়। কিন্তু সালমানের কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল, সেটা আমি মা, আমি ভালো জানি।’
হয়তো খুলনায় থাকার সময় সালমান ও মৌসুমীর মধ্যে পরিচয় থাকতে পারে, সেই পরিচয়ে পরে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে! এ কথার উত্তরে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট বেতারে আমার ছেলে চার বছর বয়সে “প্রজাপতি প্রজাপতি” গানটি গেয়েছিল। সেখানে আরও অনেক গুণী শিল্পী ছিলেন। এখন এসব শিল্পী কি বলবেন, তাঁরা সালমানের সঙ্গে গান গেয়েছেন? বন্ধুত্ব আর পরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।’