সুরমা নদীর পাড়ে ফুর্তি-তামাশা; সিলেটে ৫৩ নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করলো পুলিশ
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে যখন পুরো দেশ স্তব্ধ। কয়েক দফা দেশে লকডাউন থাকলেও সিলেটের আবাসিক হোটেলগুলোর দৃশ্য বলে দিচ্ছে ভিন্ন কথা। কঠিন এই মূর্হেতে সিলেটে আবাসিক হোটেলগুলোতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চলেছে অসামাজিক কার্যকলাপ। সুরমা নদী দুই পাড়ে রয়েছে দক্ষিণ সুরমা ও উত্তর সুরমা। নদীর এই দুইপাড়েই রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। যেগুলো শুধু নামেই আবাসিক। এসব হোটেলে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে নারী-পুরুষ গ্রেফতার করা হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন হোটেলের ম্যানেজার ও মালিকরা।
তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলেছে, একাধিকবার যেসব হোটেলগুলোতে রেট হয়েছে সেগুলোর ম্যানেজার ও হোটেল মালিকদের আইনের আওতায় আনতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, গত এক মাসে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ সুরমা ও কোতোয়ালী থানা এলাকায় থেকে পৃথক পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৩ জন নারী-পুরুষ। তারমধ্যে ২৬জন পুরুষ ও ২৭জন নারী।
৮মে : দক্ষিণ সুরমা থানার ভার্থখলাস্থ হোটেল লজ থেকে অসামজিক কাজে জড়িত থাকায় ৩ নারী ও ১ পুরুষকে গ্রেফতার করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সুনামগঞ্জের মো.বাবুল মিয়া (৫৫), নারায়নগঞ্জের চেহীলী ওরফে সেলি (৩৫), জৈন্তাপুরের মোছা.সুলতানা (২৪) ও গোয়াইনঘাটের জুলেখা (২২)।
২২মে : নগরীর কদমতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে অভিযান চালিয়ে ২ নারী ও ২ পুরুষকে গ্রেফতার করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নগরীর দক্ষিণ সুরমা থানাধীন কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকার মেঘনা আবাসিক হোটেলের ৩য় তলায় ১১৯ নম্বর রুমের ভিতরে অভিযান চালিয়ে ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তারা হলেন- গোলাপগঞ্জের মো.সাইফুল আলম (৩৭), একই এলাকার আলী আহমদ (৩২), সুনামগঞ্জ জেলার মোছা.কাজল বিবি (৩৮), ছাতকের মোছা.মনি বেগম (১৮)।
২৩মে : নগরীর সুরমা মার্কেটস্থ নিউ সুরমা আবাসিক হোটেল থেকে ২ নারী ও এক পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-বরিশালের রহিমা ওরফে সোনিয়া (২০), শেরপুরের বৃষ্টি আক্তার (২৫) ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের হাসান (১৮)।
২৪মে: একই মার্কেটের বদরুল আবাসিক হোটেল থেকে নারী-পুরুষ ৭জনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তারা হলেন, মোগলাবাজারের শায়েখ আহম্মদ (১৮), সাকিব আহম্মেদ (২০), তানভীর আহমদ (১৮), সুনামগঞ্জের রুবেল মিয়া ( ২০) ও ওসমানীনগরের মারুফ আহমদসহ (২৪) আরও দুই নারী।
২৬মে: নিউ সুরমা আবাসিক হোটেলে আবারো অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযানে দুই নারী ও দুই পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতার হলেন- জালালাবাদ থানার মো.মিলন (২৪), জকিগঞ্জের লিটন আহমদসহ (২০) আরও দুই নারী।
২৮মে: বার বার সমালোচিত সুরমা মার্কেটের বদরুল আবাসিক হোটেল থেকে ফের ১১ নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৮জন নারী ও ৩জন পুরুষ ছিলেন। এ দিন ওই হোটলের ম্যানেজারকেও গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখিত অভিযান ছাড়াও দক্ষিণ সুরমা ও কোতোয়ালী থানাধীন হোটেলগুলো থেকে ২০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
এদিকে একাধিকবার এসব হোটেল থেকে অসামাজিক কার্যক্রলাপে জড়িতদের ধরলেও তাকে স্রেফ আইওয়াশ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন সচেতন মহল। তাদের মতে, যেসব হোটেলে এ ধরণের কর্মকান্ড চলছে, তাদের মালিক বা ম্যানেজাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাদের আইনের আওতায় নেয়া না হলে এ অপতৎপরা হ্রাস পাবেনা।
সূত্রে জানা যায়, এসব আবাসিক হোটেলগুলোতে অভিযান চালালেও তারা এক দুইদিন পর ঠিকই এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নগরীর কালিঘাট,সাগরদিঘীর পার,তালতলা ও কদমতলীর বেশ কিছু আবাসিক হোটলেও নিয়মিত চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ।
এ ব্যপারে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ বলেন, মালিকদেরতো অভিযানের সময় পাওয়া যায়না। তবে ম্যানেজার বা স্টাফ- যাদের পাওয়া যায় তাদের আটক করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, যারা পতিতালয়ে চালায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা মানবপাচার আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যারা হোটেলে যাচ্ছে তারা রেজিস্ট্রি খাতায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রুম বুকিং দিয়েছে বলে হোটল কর্তৃপক্ষ বেঁচে যায়।তবে এবার তাদেরকে কিভাবে মানবপাচার আইনে আনা যায় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ভাসমান পতিতা বা হোটলে কর্তৃপক্ষের লোকজনকে বিভিন্ন ভাবভঙ্গিমা দেখিয়ে লোকজনকে এসব ডাকছে।তাদেরকে গ্রেফতার করে চালান করে দিলে দেখা যায় হোটেল মালিকরা বলে থাকনে তাদের হোটলে আয়ার কাজ করে থাকে।
নিশারুল আরিফ বলেন, এসব বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন। আমাদের যা যা করণীয় রয়েছে আমরা তা করে যাচ্ছি।